অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে অংশ নিতে রোববার রাতে ঢাকা ছাড়বেন। তিনি ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। ২ অক্টোবর তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

সফরে তাঁর সঙ্গে থাকবেন চার রাজনৈতিক নেতা—বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ব নেতাদের সামনে দেশের সাম্প্রতিক সংস্কার কার্যক্রম ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরবেন।

এ ছাড়া ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে আয়োজিত ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকেও যোগ দেবেন।

সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানিয়েছেন, চলতি বছরের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের নির্মাণকাজ শেষ হবে। আর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার পরিকল্পনা রয়েছে। শনিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক বৈঠকে এই তথ্য জানানো হয়।

এই জাদুঘরে পিলখানা ট্র্যাজেডি, গুম ও খুন, আয়নাঘর, শাপলা চত্বরের ঘটনা এবং দীর্ঘ দুঃশাসনের নানা চিত্র তথ্য-উপাত্তসহ উপস্থাপন করা হবে। ফারুকীর ভাষায়, “ষোলো বছরের স্বৈরশাসনের ইতিহাস যেন মানুষ স্পষ্টভাবে জানতে পারে এবং মনে রাখতে পারে, সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।”

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জাদুঘরের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, এই জাদুঘর মানুষকে অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দর্শনার্থীরা এখানে এসে গণআন্দোলনের চেতনা অনুভব করবেন।

জাদুঘরের চিফ কিউরেটর তানজীম ওয়াহাব জানান, এখানে একটি বিশেষ স্ক্রিনিং সেন্টারও থাকবে যেখানে জুলাইয়ের ঘটনাবলি ও দীর্ঘ দুঃশাসন নিয়ে তৈরি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হবে। গুম ও খুনের প্রমাণস্বরূপ অডিও–ভিজ্যুয়াল কনটেন্টও সংগ্রহ করা হয়েছে, যা দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হবে।

এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিসসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। এছাড়া গবেষক, স্থপতি, শিল্পী ও সমন্বয়কারীরাও উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা বাড়াতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর আট দফা পরামর্শ দিয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ফিসকাল ট্রান্সপারেন্সি বিষয়ক এক প্রতিবেদনে এ সুপারিশগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

প্রধান প্রস্তাবনাগুলো হলো—
১. অর্থবছরের শেষ হিসাব নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকাশ করা।
২. আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বাজেট প্রস্তুত করা।
৩. নির্বাহী কার্যালয়ের ব্যয়ের হিসাব আলাদা করে উপস্থাপন করা।
৪. রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্র বাজেটে যুক্ত করা।
৫. সর্বোচ্চ নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং বাজেট সংক্রান্ত সব তথ্য তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া।
৬. সময়মতো নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা, যেখানে বিশদ তথ্য ও প্রস্তাবনা থাকবে।
৭. প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন সম্পর্কিত চুক্তির মূল তথ্য প্রকাশ করা।
৮. সরকারি ক্রয়ের বিস্তারিত তথ্য জনগণের সামনে উন্মুক্ত করা।

এই পরামর্শগুলোর উদ্দেশ্য হলো সরকারী ব্যয় ও আয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং জনগণের কাছে জবাবদিহিতা আরও শক্তিশালী করা।

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের আবেদন এখন থেকে দেড় মাস বা সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে এনআইডি অনুবিভাগসহ আঞ্চলিক, জেলা, সিনিয়র এবং উপজেলা-থানা পর্যায়ের নির্বাচন অফিসগুলোকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি কমিশনের মাসিক সমন্বয় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ইসি সূত্র জানায়, এতদিন এনআইডি সংশোধনের আবেদনের নিষ্পত্তিতে এক থেকে দুই বছর সময় লেগে যেত, কিছু ক্ষেত্রে তারও বেশি। এতে সাধারণ নাগরিকরা ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আবেদন জমা থেকে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি পর্যন্ত সময় সীমিত করা হয়েছে ৪৫ দিনে। কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও নাগরিকদের হয়রানি শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ।

ভোটার হওয়ার সময় নাগরিকদের দেওয়া ব্যক্তিগত তথ্যসম্বলিত নিবন্ধন ফরম-২ কে গুরুত্ব দিয়ে সংশোধনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন) সাইফুল ইসলাম জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন ৪৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ফরম-২ কে মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা — পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময় আর ন্যূনতম পরিমাণ অর্থ বা নগদ মার্জিন জমা রাখার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে এই শর্ত তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর ফলে আমদানিকারকরা এখন থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো পরিমাণ পণ্যের জন্য এলসি খুলতে পারবেন।

নতুন নীতির কাঠামো

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০২৫-২০২৮ মেয়াদের জন্য নতুন আমদানি নীতি আদেশ তৈরি করছে। এতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে, এলসি খোলার ক্ষেত্রে ন্যূনতম দর বা নগদ মার্জিনের বাধ্যবাধকতা আর থাকবে না। খসড়া নীতিতে আরও কয়েকটি বিধান সংশোধন করে আন্তর্জাতিক বাজার ও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য আনার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, খসড়া নীতিটি আগামী সপ্তাহেই বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের কাছে উপস্থাপন করবেন সচিব মাহবুবুর রহমান। উপদেষ্টা প্রয়োজনীয় মন্তব্য দিলে তা যুক্ত করে নীতিটি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হবে।

সচিবের বক্তব্য

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন,

“আমদানি নীতি আদেশে এলসির ন্যূনতম দর-সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা বাদ দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা থাকবে। নতুন নীতি আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।”

পেছনের প্রেক্ষাপট

বিদ্যমান আমদানি নীতি আদেশ ২০২১-২০২৪ মেয়াদের জন্য কার্যকর ছিল এবং তা ২০২৪ সালের জুনে শেষ হয়েছে। নতুন নীতিমালা প্রণয়নের কাজ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছিল। দীর্ঘ আলোচনার পর এবার এর চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত হলো।

সম্ভাব্য প্রভাব

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নতুন সিদ্ধান্তে আমদানিকারকদের জন্য প্রক্রিয়া সহজ হবে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য। তবে একই সঙ্গে সতর্কবার্তা এসেছে—এতে যদি লাগামহীন আমদানি বাড়ে, তবে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ তৈরি হতে পারে।