ঢাকা

সর্বকনিষ্ঠ ও প্রথম মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানির অভূতপূর্ব উত্থান

-
মাত্র এক বছর আগেও জোহরান মামদানি ছিলেন নিউইয়র্কের রাজনীতিতে প্রায় অচেনা নাম। আর আজ তিনি ইতিহাসের অংশ—শহরের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় মেয়র, বয়স মাত্র ৩৪ বছর। তাঁর এই উত্থান শুধু আমেরিকার নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

🔹 বজ্রগতির উত্থান

ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট হিসেবে মামদানির উত্থান ছিল চমকপ্রদ। তরুণ ভোটারদের অংশগ্রহণ, ঘরে ঘরে প্রচারণা, আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রসিক অথচ মানবিক বার্তায় তিনি গড়ে তুলেছেন এক নতুন রাজনৈতিক ধারা।
তাঁর জনপ্রিয় স্লোগান “জীবন এত কঠিন হতে হবে না” তরুণদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। কখনো ‘হালালফ্লেশন’-এর মতো নতুন শব্দ তৈরি করে আলোচনায় আসেন, কখনো সাবওয়ে ট্রেনে মানুষের সঙ্গে গল্প করেন বা সমুদ্রতীরে গরিব মানুষের পক্ষে শীতল ঢেউয়ে ঝাঁপ দেন—সবই তাঁর রাজনৈতিক মানবিকতার প্রতীক।

🔹 সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি

মামদানির প্রচারণার ভিডিওগুলোয় দেখা গেছে তাঁকে মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে—বসন্তের সকালে শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কফি খেতে, অথবা রাতের কারখানায় নাইট শিফটে থাকা অভিবাসীদের সঙ্গে আলাপ করতে।
তিনি বলেন,

“রাজনীতি মানে ক্ষমতা নয়, মানুষের জীবন সহজ করা।”

এমন মানবিক অবস্থান তাঁকে দ্রুত জনপ্রিয় করে তোলে, বিশেষত তরুণ ও অভিবাসী সমাজে।

🔹 ব্যতিক্রমী পটভূমি

উগান্ডার কাম্পালায় জন্ম নেওয়া মামদানি মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারসহ নিউইয়র্কে আসেন। তাঁর মা মীরা নায়ার একজন বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা, আর বাবা মাহমুদ মামদানি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
ব্রঙ্কস হাই স্কুল অব সায়েন্সে পড়ার সময় তিনি স্কুলের প্রথম ক্রিকেট দল গঠন করেন। পরে বোডউইন কলেজে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন’ অধ্যায়।
রাজনীতিতে আসার আগে তিনি কাজ করেছেন কমিউনিটি অর্গানাইজার ও বন্ধক জব্দ প্রতিরোধ পরামর্শক হিসেবে—যেখানেই গেছেন, মানুষের সমস্যার সমাধান খুঁজেছেন সরাসরি মাঠে নেমে।

🔹 রাজনীতিতে প্রথম পদচারণা

২০২০ সালে তিনি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ৩৬তম জেলা থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে প্রথম দক্ষিণ এশীয় ও তৃতীয় মুসলিম হিসেবে ইতিহাস গড়েন। ২০২১ সালে তিনি সিরীয় বংশোদ্ভূত শিল্পী রামা দুয়াজিকে বিয়ে করেন।

🔹 নীতি ও প্রতিশ্রুতি

মামদানির নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো ছিল সরল কিন্তু গভীর—

ভাড়া নিয়ন্ত্রণ ও সাশ্রয়ী আবাসন

সুলভ শিশু যত্ন

সবার জন্য সহজলভ্য মুদি বাজার

গণপরিবহনে বিনিয়োগ

ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধি ও করপোরেট ট্যাক্স সংস্কার

তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন সিটি-মালিকানাধীন মুদি দোকান গঠনেরও—যা নিউইয়র্কে প্রথম উদ্যোগ হতে পারে।

🔹 প্রতিবন্ধকতা ও স্থিতিশীলতা

প্রচারণার সময় তাঁকে বর্ণবাদী ও ইসলামবিরোধী হামলার মুখেও পড়তে হয়েছে। রিপাবলিকান প্রচারণা তাঁকে “চরমপন্থী” বলে আখ্যা দেয়। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তি তাঁকে “দেশ থেকে বহিষ্কার” করার হুমকিও দিয়েছিল।
তবু মামদানি হাল ছাড়েননি। তিনি ইংরেজির পাশাপাশি উর্দু, হিন্দি ও স্প্যানিশ ভাষায় প্রচারণা চালান—মসজিদ, স্কুল, মার্কেট, কারখানা—যেখানেই মানুষের কথা, সেখানেই তিনি।

🔹 এক নতুন প্রজন্মের প্রতীক

৯/১১-পরবর্তী প্রজন্মের একজন মুসলিম হিসেবে মামদানির নেতৃত্ব এক নতুন বার্তা দিয়েছে—সহানুভূতি, সমতা ও ন্যায়ের রাজনীতি। তিনি বিশ্বাস করেন,

“আমরা যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে নীরব থাকি, তবে গণতন্ত্রও নীরব হয়ে যাবে।”

🔹 নিউইয়র্কে নতুন সূর্যোদয়

আজ নিউইয়র্কবাসী তাকিয়ে আছে এক নতুন অধ্যায়ের দিকে। জোহরান মামদানি শুধু শহরের মেয়র নন—তিনি এক প্রজন্মের আশা, যারা বিশ্বাস করে রাজনীতি হতে পারে সৎ, মানবিক ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।

তার এই অভূতপূর্ব উত্থান প্রমাণ করেছে—নিউইয়র্কের রাজনীতি বদলাচ্ছে, এবং সেই পরিবর্তনের মুখ জোহরান মামদানি।



কমেন্ট বক্স