বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ খাতে গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিত করার অসামান্য উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ দ্বিতীয়বারের মতো ‘ক্লায়েন্ট প্রটেকশন সার্টিফিকেট (সিপিসি) গোল্ড’ অর্জন করেছে ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি। আন্তর্জাতিক সংস্থা মাইক্রোফাইন্যান্স রেটিং (এমএফআর) এই স্বীকৃতি দিয়েছে ব্র্যাককে। এর আগে ২০১৬ সালে একই স্বীকৃতি পেয়েছিল সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার ঢাকার মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুব। অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ এবং মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ পরিচালক অরিঞ্জয় ধর বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গ্রাহকের অধিকার ও সুরক্ষা বিষয়ক আটটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। এসব মানদণ্ডের মধ্যে রয়েছে—স্বচ্ছ ঋণপ্রদান প্রক্রিয়া, গ্রাহকবান্ধব সেবা, অতিরিক্ত ঋণ প্রতিরোধ, ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ, তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা।
বক্তব্যে অরিঞ্জয় ধর বলেন, “এই বছর বিশ্বে মাত্র আটটি প্রতিষ্ঠান সিপিসি গোল্ড সার্টিফিকেট পেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পেয়েছে কেবল ব্র্যাক। আমরা সব সময় মানুষের পাশে থেকে স্বচ্ছ ও ন্যায্য সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। বর্তমানে আমাদের গ্রাহকসংখ্যা এক কোটির বেশি, যার ৯০ শতাংশই নারী।”
এমআরএ–এর নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জানান, দেশে অনুমোদিত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯০০–এর বেশি হলেও, বাস্তবে ১৮৬টি প্রতিষ্ঠানই ৯৯ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাঁর মতে, “এত বেশি প্রতিষ্ঠান টিকে থাকা কঠিন হবে যদি তারা কার্যকর সেবা দিতে না পারে।”
তিনি আরও বলেন, “ঋণ মানেই সফলতা নয়। উদ্যোক্তা হতে হলে ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হয়। ব্যাংক ঋণের ৩ থেকে ৫ শতাংশ খেলাপি হওয়া স্বাভাবিক, তেমনি ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রেও কিছু ব্যর্থতা থাকে। তবে এর অর্থ দেশেই থাকে, বিদেশে যায় না।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ জানান, বিদেশি সাহায্য ও বিনিয়োগ কিছুটা কমেছে। বিশেষ করে ইউএসএআইডি ও ইউরোপীয় সংস্থাগুলো এখন তাদের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা খাতে বেশি অর্থ ব্যয় করছে।
হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, “একজন ব্যক্তি যদি একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নেয়, বর্তমানে সেটি নির্ধারণের কোনো সুনির্দিষ্ট উপায় নেই। তবে শিগগিরই আমরা ‘মাইক্রোফাইন্যান্স ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (এমএফসিআইবি)’ চালু করতে যাচ্ছি, যাতে ব্যাংকের মতো ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানও ঋণগ্রহীতার তথ্য যাচাই করতে পারে।”
নারীদের অংশগ্রহণ বিষয়ে তিনি যোগ করেন, “ক্ষুদ্রঋণের ৯০ শতাংশই নারীদের নামে দেওয়া হয়, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বামীরাই সিদ্ধান্ত নেন ও কিস্তি পরিশোধ করেন। প্রকৃত অর্থে নারীর হাতে অর্থনৈতিক ক্ষমতা পৌঁছে দিতে হবে।”
বিশেষ অতিথি মো. সাঈদ কুতুব বলেন, “ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের ব্যয় অনেক বেশি, আবার তাদের নির্ধারিত ঋণসীমা পুরোপুরি ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। ফলে অনেক গ্রাহক আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, যার প্রভাব পড়ে সামগ্রিক লেনদেনে।”