রাজীব আশরাফের ফুসফুসের সমস্যা গুরুতর হয়ে উঠেছিল; সেই সময় তিনি হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই সংগীতশিল্পী সুনিধি নায়েকের সঙ্গে মেসেজে কথা বলছিলেন তিনি। সেই সময়ই সুনিধিকে পাঠালেন তাঁর লেখা ‘ভাল্লাগেনা’ কবিতাটি, সঙ্গে অনুরোধ—“এই কবিতাটা তুমি আর অর্ণব গেয়ো।”
পরে ২০২০ সালে কবিতাটি আসে রাজীব আশরাফের কাব্যগ্রন্থ ধরেছি রহস্যাবৃত মহাকাল-এ। বইটির প্রচ্ছদও করেছিলেন অর্ণব। রাজীবের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল গভীর। রাজীবের লেখা ও অর্ণবের কণ্ঠে ‘হোক কলরব’সহ বেশ কিছু গান জনপ্রিয় হয়েছিল।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রাজীব আশরাফের মৃত্যু হয়। কিন্তু মৃত্যুর আগেই শুনে গেছেন ‘ভাল্লাগেনা’র সুর। সুনিধির কথায়, সুরটা শুনে রাজীব ছিলেন দারুণ খুশি। তবে গানটি প্রকাশের সময় তিনি আর বেঁচে ছিলেন না—এই আফসোস আজও রয়ে গেছে অর্ণব ও সুনিধির মনে। অর্ণব তাঁর স্মৃতিতেই নতুন অ্যালবামের নাম রেখেছেন ভাল্লাগেনা, যা রাজীব আশরাফকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার বনানীর এক ক্যাফেতে অ্যালবামের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়। সেখানে দেখানো হয় ‘ভাল্লাগেনা’ গানের ভিডিও। গেয়েছেন অর্ণব ও সুনিধি দু’জনেই। প্রেমিক-প্রেমিকার আবেগ, বিচ্ছেদ আর আকুলতা ফুটে উঠেছে গানে ও ভিডিওচিত্রে। অর্ণব জানালেন, ভোরবেলার ঢাকার রাস্তায় ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে।
অ্যালবামে মোট আটটি গান রয়েছে। কয়েকটি গান কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত। এর একটি ‘জোকার’, যা কলকাতার কবি শ্রীজাতের লেখা। চার বছর আগে গানটির সুর তৈরি করেছিলেন অর্ণব—এতে জীবনের অস্থিরতা ও অর্থহীনতার ছায়া আছে।
আরেকটি গান ‘দুষ্টু ছেলে’, যা কবি জাহিদ হায়দারের কবিতা থেকে নেওয়া। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গানটি শুনে জাহিদ হায়দার মন্তব্য করেন, “সুর যেন কবিতাটিকে নতুন প্রাণ দিয়েছে।” গানটি বৃহস্পতিবার অ্যালবামের প্রথম প্রকাশিত ট্র্যাক হিসেবেই শোনা যায়।
কবি নিজেই জানান, কবিতার অনুপ্রেরণা এসেছিল একদিন মৌচাক মোড়ে যানজটে আটকে থাকা অবস্থায়—যেখানে তিনি দেখেছিলেন, এক তরুণ-তরুণী চুমুর ইঙ্গিত দিচ্ছিল একে অপরকে।
অ্যালবামের আরেক গান ‘হায় চিল’ নেওয়া হয়েছে জীবনানন্দ দাশের কবিতা থেকে। ‘তোমার মাটি’ গানটি লিখেছেন কলকাতার কবি তৌফিক, যা প্রায় দুই দশক আগে রচিত।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে একে একে দেখানো হয় ‘ভাল্লাগেনা’, ‘দুষ্টু ছেলে’, ‘জোকার’ ও ‘হায় চিল’-এর ভিডিওচিত্র। প্রতিটি গানের ভাব ও সুরে ভিন্ন ভিন্ন অনুভব—কোথাও প্রেম, কোথাও নিঃসঙ্গতা।
গানের ভিডিও প্রদর্শনের পর গিটার হাতে অর্ণব গাইলেন দুটি গান—প্রথমে ‘তোমার জন্য’, তারপর দর্শকের অনুরোধে ‘হারিয়ে গিয়েছি’। করতালিতে ভরে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল।
২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল অর্ণবের আগের পূর্ণাঙ্গ মৌলিক অ্যালবাম খুব ডুব। প্রায় এক দশক পর এল ভাল্লাগেনা। নতুন অ্যালবাম প্রকাশে এতটা ব্যবধান কেন? প্রশ্নের উত্তরে অর্ণব বলেন, “এই সময়ের মধ্যে আমি সংগীত থেকে দূরে ছিলাম না। কোক স্টুডিও বাংলায় কাজ করেছি নিয়মিত, আর মাঝরাতে নিজের অ্যালবামের গানগুলো রেকর্ড করেছি।”
হাসি-ঠাট্টার ছলে তিনি যোগ করলেন, “প্রতিবছর একটা করে অ্যালবাম করা উচিত, কিন্তু হয়ে ওঠে না। তবে এবার ২০৩৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না—তার আগেই নতুন কিছু আসবে।”